সহস্রধারা ট্রেইলঃসীতাকুণ্ড

আহমাদ যুবায়ের

২০১৭ সাল,সেপ্টেম্বর মাস।ভরা বর্ষার অন্তিমকাল।ঈদের ছুটি গুলো নষ্ট হচ্ছিলো অলস বসে বসে। যখন কাউকেই রাজি করানো যাচ্ছিলো না, তখন হঠাৎ ফোন আসলো বন্ধু আতিকের নাম্বার থেকে।গন্তব্য সীতাকুন্ড,সহস্রধারা ঝর্ণা। একদিনের ট্যুর।ট্রাভেলিং আর ট্রেকিংয়ের ছোট ও সহজ কম্বিনেশন।রাতে সব কিছু ঠিক করে পরদিন সকালে আমি, আতিক, ফারুক আর আমানাত উপস্থিত হলাম চট্রগ্রামের অলংকারস্থ বাস স্টেশনের সামনে। এখানে থেকে যেতে হবে সীতাকুণ্ড ছোট দারোগাহাট।কন্ডাকটরকে বলে রাখলে সেই নামিয়ে দিবে। 
ছোট দারোগাহাট নেমে আমরা রাস্তার পূর্বদিক (রাস্তাপার হতে হবে) হতে সিএনজি নিলাম।বর্ষার সময় হওয়ায় সিএনজি পরীর দিঘীর পার পর্যন্তই যেতে রাজি হলো, এরপরের রাস্তা গাড়ি চালানোর উপযুক্ত না।পরীর দিঘীরপার হতে কথা বলতে বলতে আমরা হাটছিলাম পাহাড়ে ঘেরা বৃষ্টিস্নাত ট্রেইল ধরে।
পরীর দিঘী পারের রাস্তা  

২০ থেকে ২৫ মিনিট মধ্যম ট্রেকিং করেই পৌছে গেলাম সহস্রধারা থেকে নেমে আসা পানি থেকে সৃষ্ট হ্রদ যা তৈরী হয়েছে পানি উন্নয়ন সমিতির দেওয়া সহস্রধারা বাধের ফলে।ভরা বর্ষায় যখন হ্রদের পানি টইটম্বুর অবস্থা তখন এই বাধ খুলে দেওয়া হয় কিছুটা। আতিক আর ফারুক এই বাধের খাড়া সরু সিড়িয়ে দিয়ে নীচে নেমে গেলো ছবি নেওয়ার উদ্দেশ্যে।

সহস্রধারা বাধ

এবার যাওয়ার পালা হ্রদের পানির মূল উৎস সহস্রধারা ঝর্ণায়। দুভাবে যাওয়া যায়। প্রথমত হ্রদের পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে সোজা ঝর্ণা অব্দি, দ্বিতীয়ত হ্রদের উপর দুটি নৌকা আছে যা দর্শনার্থীদের ঝর্ণা অব্দি নিয়ে যায়। আমরা দ্বিতীয় অপশনটাই নিলাম।মূলত হ্রদ পেড়িয়ে  যখন দূর থেকে ঝর্ণা দেখা যায় সে দৃশ্যটাই দেখার আগ্রহ থেকে দ্বিতীয় অপশন নেওয়া। 
আমাদের নৌকা যখন ডানে ঘুরছিলো তখন মনে হচ্ছিলো পাহাড়ের বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসছে  ঝর্ণার বিরামহীন জলধারা। মনোরম আর মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য অবশ্যই প্রকৃতি প্রেমীদের হৃদয় নাড়া দিয়ে যাবে।

পাহাড়ের বুক চিড়ে দেখা যায় দূর সহস্রধারা 

লোক মুখে শোনা কথা মিথ্যে নয়, ভরা বর্ষায় এই ঝর্ণা যেন তার হারানো যৌবন ফিরে পায়।ঝর্ণা যেন এক যুবতী খিলখিল করে শুধু হেসেই যাচ্ছে অবিরত। কিছুক্ষণ দাপাদাপি লাফালাফি করে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন অন্যান্য পর্যটকরা চলে যাবে সেই সুযোগটা নিবো, এভাবে অপেক্ষা করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এলো। শেষমেশ আমরা চারজন আর তিনজন অন্যগ্রুপের সদস্য ছিলো। নৌকা ফিরে আসতে বলে ছিলাম আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। যথারীতি আসলোও। ঝর্ণাকে বিদায় দিয়ে নৌকায় চড়ে বসলাম।

সহস্রধারা ঝর্ণা

প্রকৃতির আমাদেরকে এতোই পছন্দ হয়ে গেলো নৌকা কিছুদূর যাওয়ার পর বৈঠা গেলো ভেঙ্গে। দূরের মসজিদে মাগরিবের আযান পড়ছিলো। আমরা কজন হ্রদের মাঝখানে মশার কামড় খাচ্ছিলাম আর গোল গোল ঘুরছিলাম। মাঝিকে বললাম ফোন দেন আরেকটা নৌকায়, সে বলল-ঐ নৌকা বেধে রেখে সে চলে গেছে।আর তার কাছেও মোবাইল নেই। উপায় বুঝছিলাম না কি করা যায়। ভাগ্য ভালো ছিলো অন্য গ্রুপের কয়েকজন আগেই পার হয়ে গিয়েছিলো, তাদের বললাম আপনার গ্রুপে ফোন দিয়ে বলেন আমাদের অবস্থা আর যেভাবেই হোক নৌকা পাঠাতে আরেকটা। 
প্রায় ১৫/২০ মিনিট মশার কামড় খাওয়ার পর আরেকটা নৌকা আসলো, একটার পেছনে একটা বেধে দিয়ে চলাতে যাচ্ছিলো আর একটার সাথে একটা গিয়ে বাড়ি খাচ্ছিলো।আসলে তারাও আনাড়ি। বললাম পাশাপাশি বেধে চালান বাড়ি খাবে না তাহলে।অবশেষেকিনারায় পৌছুলাম যখন তখন রাত নেমে আসছে। মাঝির সাথে হাটতে হাটতে ফিরতি পথ ধরলাম।

সহস্রধারা ঝর্ণা

***সমাপ্ত***

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছেরাপুঞ্জী-মৌসিনরাম ও গোয়াইন-সারি নদী বেষ্টিত সিলেটের অদ্যপ্রান্ত

পুরনো ঢাকার অলিতে গলিতে