জমিদারের শহরঃ নাটোর
আহমাদ যুবায়ের
সফর সঙ্গীঃ আরমান হোসাঈন
সফর সঙ্গীঃ আরমান হোসাঈন
২০১৮ সালের ২২ কি ২৩ জুন ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত ঘরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম একরকম। বন্ধু-বান্ধব
সবাই ব্যস্ত। বহু কষ্ট বাল্যবন্ধু আরমানকে পেলাম চট্টগ্রাম থেকে বের হবো বলে! ফোনে
কথা বলে ঠিক করলাম মহেশখালী যাবো, দুপুর নাগাত ঘর থেকে বের হতে হবে। বাসা থেকে বের হবো,অমনি ফোন দিয়ে সে বলে বন্ধু সাতার তো
পারি না,কেমন
জানি লাগছে! তখন আমার উদ্দেশ্য ছিলো ঘর থেকে বের হওয়া, সেটা মহেশখালী হউক বা
অন্য কোন খানে। বললাম আচ্ছা তুই অলংকার মোড় আই,
উত্তর বঙ্গের গাড়িতে উঠে যাবো,
নাটোর ঘুরে আসি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজশাহীগামী গাড়িতে চড়ে
বসলাম। জীবনে প্রথম নাটোর যাচ্ছিলাম। কিছুই চিনি না,
কিছুই জানি না। গাড়ি চলা শুরু করলো। অবশেষে চট্টগ্রাম ছেড়ে
দূরে কোথাও।টাংগাইল পেড়িয়ে গাড়ি সিরাজগঞ্জের দিকে যাওয়া শুরু করলো, কি অপরুপ দৃশ্য
কল্পনা করা যায় না যমুনা নদীর। প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি অববাহিকাটি কিসের,পরে আস্তে আস্তে যমুনা নদী প্রকাশ হলো, গাড়ি উঠে পড়লো জাতির
জনক বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর উপর। সব অচেনা জায়গা হঠাৎ করে সামনে আসলে যে অনুভূতির
সৃষ্টি হয় তাই হচ্ছিলো। রাত ঘণ হতে শুরু করলো,
চোখে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে নেতিয়ে পড়লাম গাড়ির সীটের উপর।
ভোরের আলোয় ঘুম ভাঙ্গলো যখন তখন আমরা নাটোরে ঢুকে পড়েছি, একটুপর নাটোর জিরো
পয়েন্টে নামিয়ে দিলো আমাদের দুজনকে। বন্ধু জিজ্ঞেস করে এরপর কি? বললাম চিন্তা করিস না, শহর এখনো ঘুমিয়ে, একটু বেলা যাক। এদিকে
ভিতরে আমার চিন্তা খেয়ে যাচ্ছে, আমিও তো কিছু চিনি না!
নাটোর বাজারটা কোন দিকে জিজ্ঞেস করে হাটা দিলাম, দূর থেকে দেখা
যাচ্ছিলো নাটোর শহরের রিজার্ভ পানির ট্যাংক। এর উল্টো দিকেই একটি সাধারণ মানের
হোটেলে উঠে পড়লাম দুজনে। গোসল করে লম্বা দু'ঘন্টার একটা ঘুম দিয়ে নাস্তার জন্য উঠে পড়লাম। খাবার খেতে খেতে
খোজ খবর নিচ্ছিলাম আসে পাসে কি আছে দেখার মতো স্থানীয়দের কাছে টুকটাক। বলাবাহুল্য
মানুষ জন তেমন আন্তরিক মনে হলো না আমাদের দুজনের কাছে কারোরই। জায়গাটা নাটোর বাজার
বলে, রাস্তার
বাম পাশ দিয়ে ছোট মুখের লম্বা একটি রাস্তা চলে গেছে নাটোরের পুরাতন রাজবাড়ীর
দিকে।রাণী
ভবানীর রাজবাড়ী।রাণী ভবানীর স্বামী রাজা রাম কান্ত মারা যাওয়ার
পর, নবাব
আলী বর্দী খা জমিদারি রাণী ভবানীর হাতেই ন্যস্ত করেন। রাণী ভবানীর রাজত্বকালে
বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর,পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ,বীরভূম ও মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত
লাভ করে। এসব জানার জন্য বর্তমান রাজবাড়ীর যে অবশেষ রয়েছে তা থেকে কিছুই জানা
যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। রাজবাড়ী ঘুরছিলাম আর মাঝে মধ্যে উইকিপিডিয়া/গুগল হাতিয়ে
বেড়াচ্ছিলাম। সংরক্ষণ বা সংস্কারের মাঝে যা ছিলো সেটা শুধুই প্রধাণ ফটকের গেইটটিই।
নীলাক্ষরে লেখা রয়েছে জীবনানন্দ দাশের দুইটি চরণ -
"আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,আমারে দুদন্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।"
রাণী ভবাণী রাজবাড়ীর
প্রধাণ ফটক
টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম জমিদার বাড়ীর আঙ্গিনায়। ঘুরে ফিরে
দেখলাম বিশাল জায়গা জুড়ে জমিদার বাড়ী। পুকুরে ছোট নৌকা দিয়ে জেলেদের মাছ ধরতেও
দেখলাম। এ মাছ এখন কারা খায় সেটা আর জানা হলো না।
হানি কুইন ভবন /
রেস্ট হাউস
রাণী ভবাণী রাজবাড়ীর
পরিত্যাক্ত কূয়া
রাণী ভবাণী রাজবাড়ীর
পেছনের ভাগ
কিছুক্ষণ ঘুরেফিরে দেখে বেরিয়ে পড়লাম নাটোরের বিখ্যাত
কাচাগোল্লার খোজে! আমরা যারা চট্টগ্রাম বা আশে পাশে আছি তারা কাচা গোল্লা মিষ্টির
মতো দেখলেও নাটোরে কাচা গোল্লা পায়েসের মতোই বিক্রি হয়। খুব আশা করে খেতে গিয়েও আর
খেলাম না তাই আর। গোল্লা জিনিস যদি গোল্লা না হয় তাহলে কি আর ভালো লাগে।
খোজ নিয়ে জানলাম নাটোরের চলন বিল সে সময় শুকিয়ে পানি শূণ্য, যেহেতু গ্রীষ্মকাল।
রিক্সা নিলাম নাটোর উত্তরা গণভবনের দিকে। যদিও আমরা সবাই উত্তরা গণভবন বলে একে
জানি মূলত এটা নাটোর শহরের দ্বিতীয় রাজবাড়ী। দিঘীপাতিয়া রাজবাড়ী। এককালে দিঘীপাতিয়া
মহারাজাদের বাসস্থান ছিলো বর্তমানের এই উত্তরা গনভবণ। প্রতিষ্ঠাতা রাজা দয়ারাম
রায়। প্রাসাদে প্রবেশের মুখেই রয়েছে বিশাল পাথুরে ঘড়ি যা দয়া রাম রায় ইংল্যান্ড
থেকে আনিয়েছিলেন, ঘড়ির
পাশেই বড় একটি ঘন্টা।
দিঘীপাতিয়ার রাজ
বাড়ী/উত্তরা গণভবণ
বর্তমান সময়ে প্রাসাদের আঙ্গিনায় নানান প্রজাতির দুর্লভ গাছ গাছালিতে ভরপুর। হাটতে হাটতে বঙ্গবন্ধুর হাতে রোপ্ন করা একটি হৈমন্তী গাছও চোখে পড়লো। আছে দুর্লভ সাইকাস, সৌরভী, পারিজাত, বিভিন্ন জাতের বিশাল বিশাল আম গাছ।
দূর্লভ সাইকাস গাছ
চোখে পড়লো তৎকালীন
সময়ের বিশার দরজার গ্যারেজ! কামান! ইত্যাদি।
দিঘীপাতিয়া রাজবাড়ীর
মহারাজাদের গ্যারেজ
ওই দিন রাতে ছিলো ফুটবল বিশ্বকাপ প্রিয় দল আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়ার খেলা যাতে আর্জেন্টিনা খুবই খারাপভাবে হেরেছিলো। যাই হোক ব্যাগ ঘুছিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। মূলত আমাদের সময়টি সঠিক ছিলো না, উত্তর বঙ্গ এমন জায়গা যেখানে আপনি গ্রীষ্মের সময় এসেছেন তো মরেছেন। বর্ষা কিংবা শীতকালই এসব স্থানের জন্য উপযুক্ত। অবশেষে প্রাণের শহর চটগ্রামে পৌছুলাম মিশ্র অভিজ্ঞতা নিয়ে।
***সমাপ্তি ***
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন