ছেরাপুঞ্জী-মৌসিনরাম ও গোয়াইন-সারি নদী বেষ্টিত সিলেটের অদ্যপ্রান্ত
আহমাদ যুবায়ের
২০১৮ পর আবার সুযোগ আসলো সিলেট ট্যুরের, আসলো বললে ভুল হবে, করে নিতে হলো। চট্টগ্রামে বাসস্থান হওয়াতে সিলেটের মতো দূরের ট্যুরের জন্য আসলেই অনেক
পরিশ্রম করা লাগে শুধু মাত্র সফরসঙ্গী যোগাড় করতেই। সেক্ষেত্রে এবারের ট্যুর ম্যাট
হিসেবে আমাদের সর্ব শেষ ট্যুর ‘বাঁশখালীর’ ট্যুর ম্যাটদের সহজেই পেয়ে গেলাম।
অর্থ্যাৎ আরমান,সোহেল, শিবলী ও আতা মামা।ঈদের ছুটিতে ট্যুর মানেই টিকেট সংকট। যথারীতি
আমাদের ম্যানেজার আরমান শিবলীকে সঙ্গে নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টাই আগষ্ট ১৪ তারিখ রাতের
ট্রেনের টিকেট ম্যানেজ হলো। গেলো বার বাসে যাওয়ায় সিলেট রুটের ট্রেন সম্পর্কে
কোনরূপ ধারণা ছিলো না। ১৪ তারিখ রাতে সবাই উপস্থিত চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে,
ট্রেনের বগির চেহারা দেখে আমাদের সবার মন খারাপ, উপায় নেই। যাত্রা শুরু হলো জাস্ট টাইমেই।গল্প আড্ডার সাথে
সাথে আমাদের ট্রেন চলছে-যাত্রার এক পর্যায়ে বললাম ‘যাওয়ার সময় এই ট্রেনকেই সবাই
মিস করবি দেখিস!’ সবাই বললো কেনো? বললাম সিলেটে তো যাচ্ছি ফিরতি টিকেট কিন্তু পাবো
না এটা মাস্ট! আসার সময় যা ব্যবস্থা হয় তাতেই আসা লাগবে তবে বিআরটিসির টিকেট পাওয়া
যাবে। সবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো-সবার এক কথা নেমেই ফিরতি টিকেট করে ফেলতে
হবে-যেমনে হোক। অনলাইনেও সার্চ শুরু হয়ে গেলো টিকেটের! সব বুকড।
১৫ই আগাষ্ট সকাল আটটার দিকে বাস
নামিয়ে দিলো সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের সামনে অর্থ্যাৎ আমাদের পৌছুতে দেড়ি হয়ে গেছে।
ট্রেন থেকে নেমে হাল্কা হয়ে নিলাম কয়েকজন স্টেশন সংলগ্ন গণ-শৌচাগারের। আমাদের
ট্যুর ম্যানেজার আরমান আতা মামাকে নিয়ে বাসের ফিরতি টিকেটের জন্য হন্যে হয়ে কদমতলী
তন্নতন্ন করে খুজে ফেললো কিন্তু পেলো না কিছুই। বললাম বিআরটিসিতে দেখতে-পেলো তবে
সকালের টিকিট সব! সকালের টিকিট নেওয়া কোন ট্যুরের জন্যই বুদ্ধিমানের কাজ না,এতে লস
বৈ অন্য কিছু হয় না। কারণ রাতে তো আপনি ট্যুর করতে পারবেন না, সকাল থেকে
সন্ধ্যাটাই কাজে লাগাতে হয়। টিকেটের পিছনে পাক্কা এক ঘন্টা নষ্ট হলো আমাদের। বললাম
দেখ টিকিট ম্যানেজ হয়ে যাবে আগে একটা রুম দরকার ব্যাগ গুলো রাখা লাগবে নাস্তা সেরে
বের হতে না পারলে আজকের পুরো দিনটাই মাটি হবে। দিক নির্দেশনার দায়িত্ব যেহেতু আমার
কাঁধে ছিলো তাই ভুল করা যাবে না। আমার হাতে অপশন ছিলো শিবগঞ্জ অথবা আম্বরখানা।
শিবগঞ্জ যেহেতু সেখান থেকে লোকাল বাস ছাড়ে আর আম্বার খানা থেকে সিনএনজি ভালোই
পাওয়া যায়। আবার শিবগঞ্জের দিকে শুধু জাফলং রুট আম্বরখানা থেকে উভয় দিকেই
ডিস্ট্যান্স সমান। তাই আম্বারখানাকেই বেস্ট হিসেবে নিয়ে সিএনজি ঠিক করলাম। স্টেশন
থেকে আম্বারখানা যাওয়ার পথে পড়বে সিলেটে সর্বপ্রথম সুরমা নদীর উপর লৌহ নির্মিত
ক্বীণ ব্রীজের উপর।
ক্বীন ব্রীজ |
আম্বরখানা পৌছে গরু খোজার মতো
খুজেও একটা রুম পেলাম না আর যা পেলাম তার ভাড়াও গগণচুম্বী। তবে লাভ একটা হলো আর
সেটা হলো বাসের টিকেট! এখানে এসে ‘’মামুন’’ বাসের পাচটা টিকিট ঠিকই পেয়ে গেলাম, তাও সামনের দিকের সিট। এদিকে সকালের
নাস্তাও হয়নি কাধে ভারী ব্যাগ সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত! কিযে করি কিছুই মাথায়
আসছিলো না, তবে ঘাবড়ালাম না। সিএনজি ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম আশপাশ ভালো থাকার হোটেল
কোথায় পাওয়া যাবে কম খরচে? সে বলল- চলেন সামনে বন্দর বাজারেই আছে কম খরচে ভালো
মানের হোটেল। আম্বরখানা থেকে একটু সামনেই (১০ মিনিটের হাটা রাস্তা) বন্দর বাজার
সাথে লাগানো লালবাজার (কাচাবাজার)। বন্দর বাজার নেমে পেয়ে গেলাম কাঙ্ক্ষিত একটা
মনের মতো হোটেল। হোটেল বনগাঁও আবাসিক। যারা সিলেটে কম খরচে হোটেল পেতে
চান পিক সিজনেও তারা অবশ্যই এখান থেকে ঘুরে যাবেন।
হোটেলে ঢুকে অনেকেই গোসলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো দেখে মানা করে দিলাম, বললাম এমনিতেই সময় শেষ- তার উপর খাওয়া দাওয়া হয়নি জনে জনে গোসল করে ফ্রেস হতে গেলে ১২টা বাজবে ট্যুরের। কোন মতে দাত ব্রাশ করে বের হয়ে পরলাম সকালের নাস্তার জন্য! বেলা তখন ১০টা! বন্দর বাজারে মান সম্মত রেষ্টুরেন্ট ‘’দিলখোশ রেষ্টুরেন্ট”।
নাস্তা করতে করতে আমরা ডিসাইড করতে লাগলাম কোন দিকে গেলে
ভালো হয় আর আমাদের নষ্ট করা সময় কাভার দেওয়া যায়। যেখানে বিছানাকান্দি আর রাতারগুল
একই রুটে সেটা সেখানে জাফলং অন্য রুটে! অল্প সময় থাকায় আর রাতারগুল মাস্ট করাই লাগবে এই ঝোঁকে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেলো। সিএনজি
ঠিক করলাম বিছানাকান্দি ও রাতার গুলের জন্য। ঠিক হলো সিএনজি প্রথমে গোয়াইনঘাট
নামিয়ে দিবে সেখান থেকে বোটে করে আমরা যাবো বিছানাকান্দি। বিছানাকান্দি থেকে এসে
সিএনজি নিয়ে আসবে রাতারগুলে অবস্থিত জলাবন দেখাতে রাতারগুল ঘাটে। মনে সংশয় নিয়ে সিএনজিতে উঠলাম সময় কাভার দিতে পারবো তো! মাঝপথে আমি আর আরমান প্ল্যান চেঞ্জ করে ভোলাগঞ্জে গাড়ি নিতে চাইলামও কিন্তু বাকীদের জন্য আর হলো না। কপাল যখন খারাপ হয় চারদিক থেকেই খারাপ হয়, আমাদের ড্রাইভারও পড়ছে বুজুর্গ গোচর
একজন চাচা মিয়া। খুবই স্লো চালাচ্ছিলেন। বুঝতে পারছিলাম সময় কাভার হবে না, তারপরও
কিছুই করার নেই। যখন গোয়াইনঘাট সালুটিকর পেড়িয়ে গোয়াইনঘাটের বিছানাকান্দি যাওয়ার
ঘাটে পৌছুলাম তখন দুপুরের আযান হয়ে গেছে। ঘাটে এক বিদঘূটে অবস্থা সিন্ডিকেটের। দুই থেকে তিনজন সিন্ডিকেটর সব গুলো নৌকা হাত করে রেখেছে আর এমন সব ভাড়া বলছিলো বিছানাকান্দি পর্যন্ত যা সম্পূর্ণ অবাস্থব। সিন্ডিকেটের বেড়াজাল থেকে খুজে পেলাম একটা বিশাল নৌকা যেটা বড় হওয়াতে কেউ নিচ্ছিলো না দরদামে কুলাতে পারবে না বলে আর নৌকাতে কোন
ছইও নেই-বৃষ্টি পড়লে একেবারে শেষ! সিন্ডিকেট থেকে বাচতে মাঝির কাধে হাত দিয়ে
বন্ধুর মতো বললাম আমারা পাচজন আছি পনের’শ দিবো তুমি আরো পাচজন তুলো পনের’শ দিয়ে,
তোমার আজকের ভাড়া হয়ে যাবে। সে রাজি হয়ে গেলো! আমরা উঠে পড়লাম ত্রিশ জনের একটা
নৌকায়। আমাদের দেখে একজন এসে বললো-ভাই লেডিস এলাও করবেন? আমি বললাম কেনো নয় আসুন!
হয়ে গেলো আরো চারজন, এসুযোগে আরো এক কাপল উঠলো তাদের দুই পিচ্ছি বাচ্চা নিয়ে- মোট
১৩ জন। মাঝিকে বললাম হয়েছে এবার ছাড়ো। আমাদের নৌকা ছুটলো গোয়াইনঘাট থেকে পিয়াইন
নদীর বুক চিড়ে খাসিয়া পর্বত থেকে নেমে আসা ঝর্ণার পানিতে সৃষ্ট হ্রদের পানে যার
অন্তিমে রয়েছে শান্ত বিছানাকান্দি।চারপাশ দিয়ে ছোট ছোট অসংখ্য নৌকা
ছুটছে বিছানাকান্দির পানে।
পিয়াইন নদী বিছানাকান্দির পথে |
বুঝলাম ঈদের ছুটিতে বিছানাকান্দি
পর্যটকে ভরপুর থাকবে।ঘটলোও সেই-যখন বিছানাকান্দি নৌকা পৌছুলো ভীড়ের মধ্যে আর
বিছানাকান্দি দেখাই যাচ্ছে না তার উপর বসেছে ভারতীয় বাজার! সাবান, ডিটার্জেন্ট,
শ্যাম্পু, হরেক পদের চকলেট হাবিজাবিতে ঠাসা দোকানগুলো। বাজার পেড়িয়ে একটু ভিতরে
গিয়ে বিছানাকান্দী মূল পয়েন্ট দেখতে পেলাম এর ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জী-মৌসিনরাম সংরক্ষিত বনভূমির সারি
সারি পাহাড় আর পাহাড় স্পর্শ করে থাকা মেঘ দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। ঝর্ণা হিম শীতল
পানীতে পা ভিজিয়েই পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। বলে রাখা ভালো ভারতের এই চেরাপুঞ্জী-মৌসিনরাম সংরক্ষিত পাহাড়ে ঘেরা বনভূমি আর গোয়াইন ও সারি
নদীর অববাহিকাই সিলেটের জাফলং থেকে শুরু করে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর অর্থ্যাৎ
পূর্ব থেকে উত্তর পর্যন্ত সকল নান্দনিকতার উৎস!
বিছানাকান্দির জলরাশি |
রাত নটার
দিকে বের হলাম আমাদের সোহেল হযরত শাহ জালাল (রহঃ) এর মাজারে যেতে আগ্রহী
তাই! যদিও আমাদের কেউই যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলো না, তারপরও সবাই গেলাম রাতের খাবারও খেয়ে আসা যাবে আম্বারখানার রেষ্টুরেন্ট গুলোর
একটি থেকে এই চিন্তাই। দরগায়ে গিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমাদের সবার মনেই শুধু একটাই
কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো- এসব কি আসলেই ইসলাম সমর্থন করে! যাই হোক সোহেল অনেক্ষণ সময় মাজারে দিয়ে আসার পর রাতের খাবার সেড়ে রুমে গিয়ে
ঘুমিয়ে পড়লাম সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে।
দ্বিতীয় দিনের শুরুটা হয়েছিলো একটু সকাল সকাল। সকাল ৬টাই উঠেই আমরা তৈরী হয়ে নিলাম যে যাএ মতো, সাতটাই রাস্তায় নামলাম সকালের নাস্তার উদ্দেশ্যে দিলখোশ রেস্টুরেন্টে। ডিম পরটা দিয়ে নাস্তা সেরে সিএনজি ঠিক করলাম রাতারগুল ও ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টের কথা বলে। দিনটি ছিলো জুমাবার। তাই তাড়াহুড়ো ছিলো একটু জুমার নামাজও যেন মিস না হয় আবার ট্যুর টার্গেটও যেন সম্পূর্ণ হয়। ড্রাইভার এবারেরটা অনেক মিশুক পর্যায়ের না হলেও মুটামুটি ভালো চালাচ্ছিলো এদিক সেদিক কথা বলে বলে। আকাশ মেঘ জমে ছিলো। যেকোন সময়ই বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা ছিলো। এয়ারপোর্ট রোডে (গোয়াইন ঘাট রোড) ঘণ্টা খানেক চলার পর সিএনজি রাতার গুল মূল সড়কে নামলো যার অবস্থা মোটেও ভালো ছিলো না। এখান থেকে সি এন জি যায় ১৫০ টাকায়। বড় বড় খানাখন্দ বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। সিএনজির ভিতর আমরা নাচতে নাচতে যাচ্ছিলাম এক প্রকার। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আমারা পৌছুলাম রাতারগুলো সোয়াম্প ফরেস্টের মূল ঘাটে। ঘাট ইজারা নিয়েছে এক ব্যক্তি। সব গুলো নৌকাই তার কব্জাই। ভাড়া সে বলে দিচ্ছে , দরদাম যা করার তার সাথেই করা লাগবে। দরদাম আর কি সে যা বলে তাই! বহু চেষ্টাইও ৮০০ টাকার ভাড়া ১২০০ টাকার নিচে দিলো না! নিরুপায় হয়ে তাতেই রাজি হওয়া লাগলো। নৌ যাত্রা শুরু হলো জলাবনের উদ্দেশ্যে-বেশ ভালোই লাগছিলো আমাদের জলাবন বেধ করে যখন আমাদের নৌকা আরো ভিতরে প্রবেশ করছিলো। একটা দুটো বানরও চোখে পড়লো কারো কারো। আমাদের ছোট মাঝি ফয়েজ আহমেদ তাঁর ডিঙ্গী নিয়ে রাতারগুলে অবস্থিত মিঠাপানির জলাবন পরিভ্রমণ করাচ্ছে!
এতো এতো পানির উৎস সিলেটের গোয়াইন নদী ও চেঙ্গীর খাল। বর্ষায় এই জলাবনের পানীর অভাব হয় না কিন্তু শীতকালে চেঙ্গীর খালের পানি ধরে রেখে এই বন কিছুটা টিকিয়ে রাখা হয় যেন জলজ উদ্ভিদ মারা না যায়। মজার বিষয় হচ্ছে এই রাতারগুলের ঘাট থেকে আপনি গোয়াইন নদী হয়ে বিছানাকান্দি পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন!
জলাবনের এক প্রান্তে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, এখানে যারা আসেন মাঝিরা সবাই তাদের এখানেই নামিয়ে দিয়ে যায়, পরে এখান থেকে নিয়ে যায়, চাইলে আপনি নৌকা নিয়ে ঘুরতেও পারবেন জলাবনে। অনেক্ষন ধরেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো আমরা যেই নামলাম ওয়াচ টাওয়ারে বৃষ্টির বেগের সাথে সাথে বাতাসের বেগের তীব্রতাও যেন সমানে বাড়তে লাগলো। আমরা নিরাপদ আশ্র্য খুজতে ওয়াচ টাওয়ারের উপর চলে আসলাম, বৃষ্টি ও বাতাসের বেগ এতোই বেশি ছিলো যে যারাই নৌকা করে আসছে তারাই ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পড়ছিলো ভেজা থেকে বাঁচার জন্য। এমন অবস্থায় আমি বললাম কিরে ভাই আমার মাথা ঘুরছে নাকি টাওয়ার দুলছে! আমার কথা যেন লুফে নিলো মামা, বললো হ্যা হ্যা টাওয়ার দুলছে। ওভার লোডের কারনে টাওয়ার এদিক ওদিক দোল ছিলো কিছুক্ষণ পরপর। আমরা সবাই মনস্থির করে নিলাম নেমে যেতে হবে, ঝড় তুফান যাই হউক এখানে টাওয়ারের নীচে চাপা খাওয়া থেকে বাচতে হলে বৃষ্টি বিলাশ করাই লাগবে! সবাই নেমে গেলাম বৃষ্টির ভিতর।নৌকায় উঠে ভিজতে ভিজতে আসলাম ঘাটে তখনও বৃষ্টি হচ্ছিলো। এ নিয়ে টানা দুইদিন ভিজলাম। চা খাওয়া লাগবে। সমস্ত শরীর ভিজে কাক। চায়ের জন্য বলা হলো। সবাই ভিজে ভিজে চা খাচ্ছি আর বৃষ্টি বিলাশ করছি।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট অভিযানের ইতি টেনে আমরা চললাম ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টের দিকে। তুমুল বৃষ্টি পড়ছিলো যেখানে আমরা আগে থেকেি ছিলাম ভেজা অবস্থায়। আমি আর শিবলী সিএনজির ভিতর শার্ট খুলে স্যান্ড গেঞ্জি পড়ে বসে রইলাম গায়ের জামা শুকাতে হবে বলে। বৃষ্টি একটু কমে আসলো যখন আমরা সালুটীকর রাস্তা ক্রস করছিলাম, আমাদের ভেজা শার্ট সিএনজি থেকে সাবধানে বাহিরে ধরে রাখলাম-মিনিট বিশেক পর মুটামুটি গায়ে রাখা যায় মতো শুকালো। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে আমরা যখন ভোলাগঞ্জ জিরো পেয়েন্টে এসে পৌছুলাম ইমামের ওয়াজের তখম প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি বাংলাদেশের ভোলাগঞ্জের শেষ সীমানার জামে মসজিদ। মসজিদের পাশেই ভোলাগঞ্জ স্থলশুল্ক বন্দর যেখানে অপেক্ষা করে ভারত থেকে আগত পাথর বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য।
আমরা পরিষ্কার হয়ে ওযু করে মসজিদে বসে পড়লাম খুৎবা শুনবো বলে। নামাজ শেষ হলো, আমরা ঘাটে চলে আসলাম। এখানে একরকম সিন্ডিকেট করে রাখা আছে সাইন বোর্ড দিয়ে বড় বড় করে লেখা আটজন আটশত টাকা। নয়নাভিরাম জলরাশি পাড় করে আমরা এসে পৌছুলাম ভোলাগঞ্জ সাদাপথর মূলস্পটে। এখান থেকে ছেরাপুঞ্জির মেঘে ঢাকা পাহাড় সমূহ খুব কাছ থেকে দেখা যায়। স্বচ্ছ জলরাশি আর বিভিন্ন আকৃতি সাদা কালো পাথর যেকোন ভ্রমণ পিয়াসী পর্যটকের হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মতো। বিছানাকান্দিতে যে পরিমাণ পর্যটক এই জায়গায় অতোটা পেলাম না যার কারণে আমাদের সবাই একটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্যভোধ করছিলাম।
প্রায় আড়াই ঘন্টা দাপাদাপি করে অবশেষে ফিরতি পথ নিলাম। সবার চোখে মুখে আনন্দ আর তৃপ্তি বিগত দিনের খারাপ অভিজ্ঞতা কাটিয়ে চলমান দিনের সফলতায়।বেলা পড়ে এসেছে আমরা যখন সিলেট মূল শহরে প্রবেশ করছিলাম খাদিম নগর চা বাগানের রাস্তা ধরে। প্ল্যান করছিলাম হোটেলে ঢুকে গোসল সেড়ে হাল্কা নাস্তা পানি করবো বলে।
যথারীতি সোহেল আবার যাবে দরগায়ে, এবার হযরত শাহ পরাণ (রহঃ) এর দরগা।আমি আরমান আর আতা মামা গেলাম না। সোহেলকে সঙ্গ দিতে গেলো শিবলী নাসা পানি সেরে।আমরা বন্দর বাজার আর লাল বাজার রাস্তা রাস্তা ঘুরছিলাম দিলখোশ ছাড়া আর ভালো কোন রেষ্টুরেন্টের আশায়।অনেক ঘুরেও দিলখোশের মানের কোন রেষ্টুরেন্ট খোলা পেলাম না।গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে রাস্তার একপাশে বসে আমরা চিড়া চিবুচ্ছিলাম আর আড্ডা করছিলাম সময় কাটানোর লক্ষ্যে। রাতের খাবার খেয়ে হোটেল রুমে চলে আসলাম, পরদিন জাফলং তামাবিল জিরো পয়েন্ট তাই প্রসার ছিলো কম। সোহেল তার পুরোনো ছবি ঘাটাঘাটি করতে হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে তোলা একটা ছবি আমাদের দেখালো, যেটা জাফলং যাওয়ার রাস্তাই পড়ে। মনে মনে ঠিক করে নিলাম এটাও দেখে আসা লাগবে এতোদূর আর কখন আসবো তার ঠিক নেই।
তৃতীয় দিন সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি। টানা দুইদিন বৃষ্টিতে ভেজায় আর সাহস হচ্ছিলো না ভেজার তাই একটু দেরী করেই বের হবো ভাবছিলাম,কিন্তু কিসের কি বৃষ্টির বেগ যেনো সমানে বেড়েই চলছিলো।উপায় নেই দেখে বেড়িয়ে পড়লাম সবাই।নাস্তা সেরে সিএনজি নিলাম জাফলং পর্যন্ত তবে শর্ত হলো যেখানে বলবো এয়াস্তায় সেখানেই থামাতে হবে। ড্রাইভারের পাশে বসে হরিপুর গ্যাস ফিল্ড সম্পর্কে জানলাম। চিনে সে, আস্বস্ত করলো নিয়ে যাবে। ১৯৫৫ সালে সর্বপ্রথম এখানে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় আর '৫৭ তে গ্যাস উত্তোলনশুরু হয়। এখানে মোট ৭টি গ্যাসকূপ খনন হয়েছে এ পর্যন্ত। পাহাড়ের চারপাশে ছোট ছোট গর্ত করে রেখেছে স্থানীয়রা পর্যটক আকর্ষণের জন্য। এক পিচ্চি এরকমি একটা গর্তে জলন্ত দিয়াশলাই ছুড়ে মারলো আর সাথে সাথে ভুম করে আগুণ জ্বলে উঠলো গর্ত মুখে।
গ্যাস ফিল্ড থেকে মূল রাস্তায় নেমে জাফলং যাওয়ার রাস্তায় পড়বে শ্রীপুরগুচ্ছ গ্রাম যেখান থেকে মেঘালয় রাজ্যের মেঘে ঢাকা ছেরাপুঞ্জি মৌসিনরাম ঘেড়া পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়। এই জায়গায় জোকের উপদ্রব বেশী যার শিকার আমাদের সোহেল।
শ্রীপুর থেকে তামাবিল জিরো পয়েন্ট হয়ে চলে আসলাম জাফংয়ে। ভারতের ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে নেমে আসা ডাওকি নদী জাফলং হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।মূলত পিয়াইন নদী অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত। জাফলং যাওয়ার রাস্তায় চোখে পড়বে সারি নদীর উপর কয়েক কিলোমিটার পরপর সারি সারি লৌহ নির্মিত ব্রীজ। কোনটা সারি আর কোনটা সিঙ্গার নদীর উপর যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে দুপ্রান্তের জনপদকে।
বর্ষাকাল হওয়াতে জাফলংয়ে পানি ছিলো বেশি তাই নৌকা করে পাড় হতে হচ্ছিলো জাফলংয়ে অবস্থিত একমাত্র ঝর্ণা "সংগ্রামপুঞ্জী" ওরফ "মায়াবতী" দর্শনের জন্য। নৌক কিছুক্ষণ জাফলং জিরো পয়েন্টে থাকার পর সংগ্রাম্পুঞ্জীর দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।
তখনও জানা ছিলো না মানচিত্র এই ঝর্ণাটিও ভারতকে দিয়ে দেয়! সংগ্রামপুঞ্জী ঝর্ণা দর্শনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় আমাদের এবারের সিলেট ভ্রমণ।
রাত ৯ঃ৪৫ মিনিটে আমাদের চট্টগ্রামগামী বাস। আল্লাহর অশেষ রহমতে কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই এবারের ট্যুর সম্পন্ন হলো শুধু ফিরতি পথে দুঘন্টা গাড়ি নষ্টের ভোগান্তি ছাড়া।
হযরত শাহ জালাল (রহঃ) এর মাজার |
দ্বিতীয় দিনের শুরুটা হয়েছিলো একটু সকাল সকাল। সকাল ৬টাই উঠেই আমরা তৈরী হয়ে নিলাম যে যাএ মতো, সাতটাই রাস্তায় নামলাম সকালের নাস্তার উদ্দেশ্যে দিলখোশ রেস্টুরেন্টে। ডিম পরটা দিয়ে নাস্তা সেরে সিএনজি ঠিক করলাম রাতারগুল ও ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টের কথা বলে। দিনটি ছিলো জুমাবার। তাই তাড়াহুড়ো ছিলো একটু জুমার নামাজও যেন মিস না হয় আবার ট্যুর টার্গেটও যেন সম্পূর্ণ হয়। ড্রাইভার এবারেরটা অনেক মিশুক পর্যায়ের না হলেও মুটামুটি ভালো চালাচ্ছিলো এদিক সেদিক কথা বলে বলে। আকাশ মেঘ জমে ছিলো। যেকোন সময়ই বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা ছিলো। এয়ারপোর্ট রোডে (গোয়াইন ঘাট রোড) ঘণ্টা খানেক চলার পর সিএনজি রাতার গুল মূল সড়কে নামলো যার অবস্থা মোটেও ভালো ছিলো না। এখান থেকে সি এন জি যায় ১৫০ টাকায়। বড় বড় খানাখন্দ বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। সিএনজির ভিতর আমরা নাচতে নাচতে যাচ্ছিলাম এক প্রকার। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আমারা পৌছুলাম রাতারগুলো সোয়াম্প ফরেস্টের মূল ঘাটে। ঘাট ইজারা নিয়েছে এক ব্যক্তি। সব গুলো নৌকাই তার কব্জাই। ভাড়া সে বলে দিচ্ছে , দরদাম যা করার তার সাথেই করা লাগবে। দরদাম আর কি সে যা বলে তাই! বহু চেষ্টাইও ৮০০ টাকার ভাড়া ১২০০ টাকার নিচে দিলো না! নিরুপায় হয়ে তাতেই রাজি হওয়া লাগলো। নৌ যাত্রা শুরু হলো জলাবনের উদ্দেশ্যে-বেশ ভালোই লাগছিলো আমাদের জলাবন বেধ করে যখন আমাদের নৌকা আরো ভিতরে প্রবেশ করছিলো। একটা দুটো বানরও চোখে পড়লো কারো কারো। আমাদের ছোট মাঝি ফয়েজ আহমেদ তাঁর ডিঙ্গী নিয়ে রাতারগুলে অবস্থিত মিঠাপানির জলাবন পরিভ্রমণ করাচ্ছে!
ফয়েজ আহমেদের নৌকায় রাতারগুল ভ্রমণ |
এতো এতো পানির উৎস সিলেটের গোয়াইন নদী ও চেঙ্গীর খাল। বর্ষায় এই জলাবনের পানীর অভাব হয় না কিন্তু শীতকালে চেঙ্গীর খালের পানি ধরে রেখে এই বন কিছুটা টিকিয়ে রাখা হয় যেন জলজ উদ্ভিদ মারা না যায়। মজার বিষয় হচ্ছে এই রাতারগুলের ঘাট থেকে আপনি গোয়াইন নদী হয়ে বিছানাকান্দি পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন!
জলাবনের এক প্রান্তে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, এখানে যারা আসেন মাঝিরা সবাই তাদের এখানেই নামিয়ে দিয়ে যায়, পরে এখান থেকে নিয়ে যায়, চাইলে আপনি নৌকা নিয়ে ঘুরতেও পারবেন জলাবনে। অনেক্ষন ধরেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো আমরা যেই নামলাম ওয়াচ টাওয়ারে বৃষ্টির বেগের সাথে সাথে বাতাসের বেগের তীব্রতাও যেন সমানে বাড়তে লাগলো। আমরা নিরাপদ আশ্র্য খুজতে ওয়াচ টাওয়ারের উপর চলে আসলাম, বৃষ্টি ও বাতাসের বেগ এতোই বেশি ছিলো যে যারাই নৌকা করে আসছে তারাই ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পড়ছিলো ভেজা থেকে বাঁচার জন্য। এমন অবস্থায় আমি বললাম কিরে ভাই আমার মাথা ঘুরছে নাকি টাওয়ার দুলছে! আমার কথা যেন লুফে নিলো মামা, বললো হ্যা হ্যা টাওয়ার দুলছে। ওভার লোডের কারনে টাওয়ার এদিক ওদিক দোল ছিলো কিছুক্ষণ পরপর। আমরা সবাই মনস্থির করে নিলাম নেমে যেতে হবে, ঝড় তুফান যাই হউক এখানে টাওয়ারের নীচে চাপা খাওয়া থেকে বাচতে হলে বৃষ্টি বিলাশ করাই লাগবে! সবাই নেমে গেলাম বৃষ্টির ভিতর।নৌকায় উঠে ভিজতে ভিজতে আসলাম ঘাটে তখনও বৃষ্টি হচ্ছিলো। এ নিয়ে টানা দুইদিন ভিজলাম। চা খাওয়া লাগবে। সমস্ত শরীর ভিজে কাক। চায়ের জন্য বলা হলো। সবাই ভিজে ভিজে চা খাচ্ছি আর বৃষ্টি বিলাশ করছি।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট অভিযানের ইতি টেনে আমরা চললাম ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টের দিকে। তুমুল বৃষ্টি পড়ছিলো যেখানে আমরা আগে থেকেি ছিলাম ভেজা অবস্থায়। আমি আর শিবলী সিএনজির ভিতর শার্ট খুলে স্যান্ড গেঞ্জি পড়ে বসে রইলাম গায়ের জামা শুকাতে হবে বলে। বৃষ্টি একটু কমে আসলো যখন আমরা সালুটীকর রাস্তা ক্রস করছিলাম, আমাদের ভেজা শার্ট সিএনজি থেকে সাবধানে বাহিরে ধরে রাখলাম-মিনিট বিশেক পর মুটামুটি গায়ে রাখা যায় মতো শুকালো। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে আমরা যখন ভোলাগঞ্জ জিরো পেয়েন্টে এসে পৌছুলাম ইমামের ওয়াজের তখম প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি বাংলাদেশের ভোলাগঞ্জের শেষ সীমানার জামে মসজিদ। মসজিদের পাশেই ভোলাগঞ্জ স্থলশুল্ক বন্দর যেখানে অপেক্ষা করে ভারত থেকে আগত পাথর বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য।
ভারত থেকে আগত পাথর বোঝাই ট্রাক |
আমরা পরিষ্কার হয়ে ওযু করে মসজিদে বসে পড়লাম খুৎবা শুনবো বলে। নামাজ শেষ হলো, আমরা ঘাটে চলে আসলাম। এখানে একরকম সিন্ডিকেট করে রাখা আছে সাইন বোর্ড দিয়ে বড় বড় করে লেখা আটজন আটশত টাকা। নয়নাভিরাম জলরাশি পাড় করে আমরা এসে পৌছুলাম ভোলাগঞ্জ সাদাপথর মূলস্পটে। এখান থেকে ছেরাপুঞ্জির মেঘে ঢাকা পাহাড় সমূহ খুব কাছ থেকে দেখা যায়। স্বচ্ছ জলরাশি আর বিভিন্ন আকৃতি সাদা কালো পাথর যেকোন ভ্রমণ পিয়াসী পর্যটকের হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মতো। বিছানাকান্দিতে যে পরিমাণ পর্যটক এই জায়গায় অতোটা পেলাম না যার কারণে আমাদের সবাই একটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্যভোধ করছিলাম।
ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর |
যথারীতি সোহেল আবার যাবে দরগায়ে, এবার হযরত শাহ পরাণ (রহঃ) এর দরগা।আমি আরমান আর আতা মামা গেলাম না। সোহেলকে সঙ্গ দিতে গেলো শিবলী নাসা পানি সেরে।আমরা বন্দর বাজার আর লাল বাজার রাস্তা রাস্তা ঘুরছিলাম দিলখোশ ছাড়া আর ভালো কোন রেষ্টুরেন্টের আশায়।অনেক ঘুরেও দিলখোশের মানের কোন রেষ্টুরেন্ট খোলা পেলাম না।গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মাঝে রাস্তার একপাশে বসে আমরা চিড়া চিবুচ্ছিলাম আর আড্ডা করছিলাম সময় কাটানোর লক্ষ্যে। রাতের খাবার খেয়ে হোটেল রুমে চলে আসলাম, পরদিন জাফলং তামাবিল জিরো পয়েন্ট তাই প্রসার ছিলো কম। সোহেল তার পুরোনো ছবি ঘাটাঘাটি করতে হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে তোলা একটা ছবি আমাদের দেখালো, যেটা জাফলং যাওয়ার রাস্তাই পড়ে। মনে মনে ঠিক করে নিলাম এটাও দেখে আসা লাগবে এতোদূর আর কখন আসবো তার ঠিক নেই।
তৃতীয় দিন সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি। টানা দুইদিন বৃষ্টিতে ভেজায় আর সাহস হচ্ছিলো না ভেজার তাই একটু দেরী করেই বের হবো ভাবছিলাম,কিন্তু কিসের কি বৃষ্টির বেগ যেনো সমানে বেড়েই চলছিলো।উপায় নেই দেখে বেড়িয়ে পড়লাম সবাই।নাস্তা সেরে সিএনজি নিলাম জাফলং পর্যন্ত তবে শর্ত হলো যেখানে বলবো এয়াস্তায় সেখানেই থামাতে হবে। ড্রাইভারের পাশে বসে হরিপুর গ্যাস ফিল্ড সম্পর্কে জানলাম। চিনে সে, আস্বস্ত করলো নিয়ে যাবে। ১৯৫৫ সালে সর্বপ্রথম এখানে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় আর '৫৭ তে গ্যাস উত্তোলনশুরু হয়। এখানে মোট ৭টি গ্যাসকূপ খনন হয়েছে এ পর্যন্ত। পাহাড়ের চারপাশে ছোট ছোট গর্ত করে রেখেছে স্থানীয়রা পর্যটক আকর্ষণের জন্য। এক পিচ্চি এরকমি একটা গর্তে জলন্ত দিয়াশলাই ছুড়ে মারলো আর সাথে সাথে ভুম করে আগুণ জ্বলে উঠলো গর্ত মুখে।
গ্যাস ফিল্ড থেকে মূল রাস্তায় নেমে জাফলং যাওয়ার রাস্তায় পড়বে শ্রীপুরগুচ্ছ গ্রাম যেখান থেকে মেঘালয় রাজ্যের মেঘে ঢাকা ছেরাপুঞ্জি মৌসিনরাম ঘেড়া পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়। এই জায়গায় জোকের উপদ্রব বেশী যার শিকার আমাদের সোহেল।
শ্রীপুর গুচ্ছ গ্রাম থেকে মেঘালয় রাজ্য |
শ্রীপুর থেকে তামাবিল জিরো পয়েন্ট হয়ে চলে আসলাম জাফংয়ে। ভারতের ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে নেমে আসা ডাওকি নদী জাফলং হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।মূলত পিয়াইন নদী অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত। জাফলং যাওয়ার রাস্তায় চোখে পড়বে সারি নদীর উপর কয়েক কিলোমিটার পরপর সারি সারি লৌহ নির্মিত ব্রীজ। কোনটা সারি আর কোনটা সিঙ্গার নদীর উপর যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে দুপ্রান্তের জনপদকে।
সারি নদীর উপর লৌহ নির্মিত ব্রীজ |
বর্ষাকাল হওয়াতে জাফলংয়ে পানি ছিলো বেশি তাই নৌকা করে পাড় হতে হচ্ছিলো জাফলংয়ে অবস্থিত একমাত্র ঝর্ণা "সংগ্রামপুঞ্জী" ওরফ "মায়াবতী" দর্শনের জন্য। নৌক কিছুক্ষণ জাফলং জিরো পয়েন্টে থাকার পর সংগ্রাম্পুঞ্জীর দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।
জাফলং জিরো পয়েন্ট |
তখনও জানা ছিলো না মানচিত্র এই ঝর্ণাটিও ভারতকে দিয়ে দেয়! সংগ্রামপুঞ্জী ঝর্ণা দর্শনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় আমাদের এবারের সিলেট ভ্রমণ।
সংগ্রামপুঞ্জী ঝর্ণা |
রাত ৯ঃ৪৫ মিনিটে আমাদের চট্টগ্রামগামী বাস। আল্লাহর অশেষ রহমতে কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই এবারের ট্যুর সম্পন্ন হলো শুধু ফিরতি পথে দুঘন্টা গাড়ি নষ্টের ভোগান্তি ছাড়া।
***সমাপ্ত***
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন