আহমেদ যুবায়ের
সময়টা ২০২০ সাল নভেম্বর ১০। করোনা মহামারীর জন্য সব ধরনের ট্যুর এন্ড ট্রাভেলিং বন্ধ। কিন্তু অফিসিয়াল কাজ কর্মের জন্যই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পরিবেশগত প্যারামিটার পরিদর্শনে বের হয়েছিলাম গালিব ভাইয়ের সাথে। অফিসের একমাত্র গার্লিভার! দুইদিনের কাজের প্রথমদিন খুব টেনে কাজ করায় দ্বিতীয় দিন কাজের চাপটা একটু কমই ছিলো বলতে হয়। টাঙ্গাইল থেকে ফিরতি পথে আমাদের শেষ লোকেশন ছিলো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক নাটিয়াপাড়া জামে মসজিদ, এর থেকে কিছু দূরেই অবস্থিত নাসির গ্লাস ফ্যাক্টরি। হাতে তখন প্রচুর সময় ঢাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য। আমার ভিতর চলছিলো টাঙ্গাইল ঘুরে ফিরে দেখার কথা তাই আসেপাশে কি আছে সেটাই দেখছিলাম গুগল ম্যাপে আর পেয়ে গেলাম নাটিয়াপাড়া মসজিদ থেকে রাস্তার অপর পাশে মহেরা পিটিসি রোড হয়ে মাত্র দশমিনিটের রাস্তায় মহেরা জমিদার বাড়ীর অবস্থান।
মহেরা জমিদার বাড়ি
স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে জমিদার বাড়ীটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়ীতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ীর কূলবধূ সহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে তারা লৌহজং নদীর নৌপথে এ দেশ ত্যাগ করেন। এখানেই তখন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল।
বর্তমানে এটি বাংলাদেশ পুলিশের তত্ত্বাবধানে আছে ও মূল জমিদার বাড়ির কাঠামো অক্ষত রেখে তৈরী করা হছে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার।
এই জমিদার বাড়িকে দর্শনার্থীদের জন্য উপভোগ্য করে তোলার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে ছোট একটি চিড়িয়াখানা যেখানে রয়েছে চিত্রা হরিণ, রাজ হাঁস, ডাহুক পাখি, ময়ূর, বিরল ডোডো পাখি, টার্কী মুরগী ইত্যাদি।ফলজ গাছের মাঝে জলপাই, আম, লিচু ইত্যাদি। আছে রানীর পুকুরপাড়। ছোট ছোট বোট আছে যেখানে বোটিং করারও ব্যবস্থা রয়েছে।
চিত্রা হরিণ
ময়ূর
পুরো রাজবাড়িকে ক্যামেরার একটি ফ্রেমে আনার অনেক চেষ্টা করেও বৃথা হয়েছি এর প্রসারতার কারণে।দেশে পুরনো অনেক রাজবাড়ি শুধু মাত্র তত্ত্বাবধানের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে কিন্তু এই রাজবাড়িটি দেখে একটু স্বস্তিবোধ করছিলাম এর তত্ত্বাবধানে কোনরূপ ত্রুটির অবকাশ নেই দেখে।
মহেরা জমিদার বাড়ি একফ্রেমে
রাজবাড়ির সামনে রয়েছে মনোরম পুকুরঘাট যেটা সময় পার করার জন্য অনেক সুন্দর একটি জায়গা।
রাজবাড়ির ভিতরে রয়েছে একটি মিউজিয়াম যেখানে সজ্জিত করা রাখা আছে দেশের ব্যবহৃত বহু পুরনো আগ্নেয়াস্ত্র যেমন থ্রী নট রাইফেল, এসেমজি, বন্দুকের ব্যরল, বুলেট রিভল্বার ইত্যাদি। এছাড়াও রাজার ব্যবহৃত পিতল ও কাসার বিভিন্ন জিনিসপত্র যেমন হুক্কা, কলস, ইত্যাদিও সুরক্ষিত আছে এই মিউজিয়ামে।
মিউজিয়ামে সজ্জিত করা অস্ত্রাধি
রয়েছে বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে আজ অব্ধি দেশের বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পোশাকের নমুনা।
বৃটিশ আমলের পুলিশের পোশাকের নমুনা
শিশুকিশোরদের আনন্দ দেওয়ার জন্য তৈরি করা হছে মিনি শিহুপার্ক যেটা বাচ্চাকাচ্চাদের প্রধান আকর্ষণ।
শিশুপার্ক
এই জমিদার বাড়ির আঙ্গিনায় ঢুকিতেই একজন প্রাপ্ত বয়স্ক থেকে ৮০টাকা টিকেট খরচ করা লাগবে সাথে যদি গাড়ি থাকে কার, জীপ কিংবা হাইসের জন্য ৫০টাকা গাড়ি পার্কিং খরচ।
সব মিলিয়ে দিনটা আপনার খারাপ যাবে না। এছাড়াও টাঙ্গাইলে রয়েছে আরো দুটি জমিদারবাড়ী একটি পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি অন্যটি ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি। অন্য আরেকটি রয়েছে সেটা চৌধুরী বাড়ি হিসেবেই পরিচিত যদিও তিনিও জমিদারই ছিলেন। সময়ের অল্পতার জন্য আর এসবের দিকে আগানো হয়ে উঠেনি। আসা করছি সময় সুযোগ হলে সেগুলোতেও একদিন যাওয়া যাবে। ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন