গন্তব্য যখন হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানা

আহমেদ যুবায়ের

 

অফিস থেকে ফোন দিয়ে বললো ভারতীয় পরিবেশ পরামর্শক দল ঢাকায় আসছে একটা প্রজেক্টের ডাটা আর স্যাম্পল কালেক্ট করা লাগবে। আপনার সাথে যাওয়া লাগবে।গন্তব্য সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানার আওয়াতাধীন একটি সনামধন্য কোম্পানির প্ল্যান্ট। ২০২১ সাল, ২০ মার্চ। ঢাকা থেকে রাওয়ানা হলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। আমাদের সাথে ছিলো আব্দুর রব ভাই, সিলেটে বহুবার তার আনাগোনা হয়েছে বিধায় অদ্যপ্রান্ত মুটামুটি সে ভালোই বুঝে। আমাদের সাথে কাঁচের স্যাম্পলিং বোতল থাকায় গাড়ি খুবই ধীর গতিতে চালানোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলাম। সিলেট মূল শহরে ঢুকার জন্য আমরা বাঁছায় করে নিলাম ঢাকা-মৌলুভীবাজার/ঢাকা-শ্রীমঙ্গল সংযোগ সড়ক রাস্তাটিকেই। মৌলুভীবাজারে-শ্রীমঙ্গল সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় মনকাড়া সব দৃশ্য সকলের চোখে পড়তে লাগলো যার মধ্যে জুম চাষের জন্য (পাহাড় পুড়িয়ে মাটিকে চাষ উপযোগী করার নাম জুম চাষ) তৈরী করা উঁচুনিচু পাহাড়ের ঢালে আনারস বাগান উল্ল্যেখ যোগ্য। এছাড়া চা বাগান তো ছিলোই সর্বত্র। সাথে ড্রাগন ফল বাগান, কলাবাগান ইত্যাদি পাহাড়ের সুশৃঙ্খল শোভা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

মৌলুভীবাজার-শ্রীমঙ্গল চা বাগান

আমাদের গাড়ি সাময়িক বিরতীতে গেলো সাতগাঁও চা বাগানে এসে। এখানে স্থাপিত করা হয়েছে ''চা কন্যার'' আদলে একটি ভাস্কর্য। এখান থেকে প্রকৃতিটি ভালোই উপভোগ করা যায়।

দেখা পেলাম স্থানীয় এক সিজনাল মধু বিক্রেতার সাথে নাম ''মধু ভাই'' আমাদের অনেক সম্মান করলো সে, সাথে তার আহরিত মধু চেখে দেখার অনুরোধও। আমরা চেখে পেলাম আসল মধু স্বাদ। সাধারণত এই মধু ঘাসফুল, আমের মুকুর, চাফুলের নির্যাস থেকে হয়ে থাকে। অর্থ্যাৎ পাহাড়ি গাছগাছড়ার ফুলের নির্যাস থেকে প্রাপ্ত মধু, স্বাদ ততোটা মিষ্টি না হলেও অল্পতেই পুরো শরীর আমাদের গরম হয়ে গিয়েছিলো।

চা বাগানের মধু

সিলেট পৌছুতে পৌছুতে সন্ধ্যা সাতটা হয়ে গেলো আমাদের। হোটেল গ্র্যান্ড সুরমাতে গিয়ে উঠলাম আমরা সকলে।

পরদিন সাইট ভিজিট পর্ব ছিলো, হবিগঞ্জ জেলার, নবীগঞ্জ থানার ইনাতগঞ্জ, জগন্নাতপুরের গিয়ে রকারী ভাবে মৎ ব্রিডিং করা হয় এমন একটি ক্যানেলের সামনে গিয়ে আমরা থামলাম। এখানে আমাদের টুকটাক কাজের পাশাপাশি আশপাশের গ্রাম বাংলার প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলাম আমরা। ক্যানেলে এক পাশটাইয় মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ অন্য পাশটায় স্থানীয় জেলে পল্লী মাছ ধরায় ব্যস্ত। বোয়াল, মৃগেল, পুটিসহ বিভিন্ন মাছই জেলেদের জালে আটকা পড়ছিলো।

ইনাতগঞ্জ সংলগ্ন ক্যানেল

এখানের সার্ভে শেষ করে চলে আসলাম আউশকান্দি বোরহান পুর গ্রামে। আশ্চর্য্য ভাবে লক্ষ্য করলাম এখানে প্রত্যেক বাসায় নলকূপ রয়েছে এমনি কি সেটা একই ভীটায় পাশাপাশি দুই ভাইয়ের দুই ঘরই হোক না কেনো। অল্প গভীরতায় এখানে ভূগর্ভস্থ পানি পাওয়া যায় হইতো এই সুবিধাটাই তারা নিচ্ছে যেটা অন্যান্য স্তানের ক্ষেত্রে হইতো প্রযোজ্য হবে না। এখানে থেকে চলে আসলাম সিলেটের কুশিয়ারা নদীর তীর, দীঘলবাক ঘাটে। নদীর দিকে অল্প কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই চোখে পড়বে শুশুক তথা ডলফিনের আনাগোনা।

দীঘলবাঁক, কুশিয়ারা নদী, এখানে দাঁড়িয়ে ডলফিন দেখা যায় খুব কাছ থেকে

পরদিন আমাদের কাজের ফাঁকেফাঁকে করিমপুর গ্রামে স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরা দেখে চলে গেলাম করিমপুর থেকে ১৫০কি্লোমিটার দূর চানপুর গ্রামে যেখানে প্রায় সাতশ ফুট মাটির নীচ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উপর দিকে উঠে আসছে।

করিমপুর গ্রাম,নবীগঞ্জ

লোক মুখে শুনে চলে গেলাম সেই অটোফ্লোর উৎ খুঁজতে। চানপুর গিয়ে আসলেই এর অস্বতিত্ব পেলাম। এরকম দুটো এই চানপুর গ্রামে রয়েছে। একটী এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে দেখে পরিষ্কার রাখা হয়েছে। অন্যটি অযত্নে পড়ে রয়েছে। বলাতেই হয় একটি কথা সিলেটের এদিগকার মানুষ গুলো খুবই আন্তরিক।

অটোফ্লো


এখান থেকে চলে আসলাম মূল কুশিয়ারা নদীর দীঘলবাক ঘাটে। নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে পড়লাম। ভাগ্যক্রমে আমি একাই ছিলাম নৌকায়। অল্প কিছুক্ষণ নৌকায় থেকে কুশিয়ারায় আবেশীত হয়ে উপরে চলে আসলাম।

কুশিয়ারা নদী

 

এদিকের কাজ গুছিয়ে আমরা রাওয়ানা হলাম সিলেট মূল শহরের দিকে। রুমে ঢুকেই বড় করে একটা গোসল দিয়ে খেতে চলে আসলাম। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে এক ছোট ভাইয়ের কাজিনের রিকুয়েস্টে কফি খেতে চললাম রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম উপশহরে অবস্থিত সেফ্রন রেস্টুরেন্টে। এখানের কফিটা দারুণ হয়।

আমাদের সাথে ইকোলজিস্ট থাকায় ক্ষণেক্ষণে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পাখির বাসা চোখে পড়ছিলো, সাথে পশুর ভিতর শেয়ালের ছুটোছুটিও চোখ এড়ালো না কারো। পাখির ভিতর বক, ঘুঘু, কাঠ শালিক, চিল, ঈগল, কাঠঠোকরা ইত্যাদি ছিলো উল্ল্যেখ যোগ্য। 

ঈগল 

 

গাছের ঢালে চিলের বাসা

পরদিনের কাজ খুব তাড়াতাড়ি সেরে ঢাকা ফিরার প্লেন ছিলো, কিন্তু শেষের দিনেই যেনো একটার পরপর একটা কাজ বাড়তে লাগলো আমাদের। যাই হোক সব কাজ গুছিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রাওয়ানা হয়ে গেলাম।

পরিশ্রান্ত রৌদ্দুরে সেচের পানিতে আন্দোলিত মন

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছেরাপুঞ্জী-মৌসিনরাম ও গোয়াইন-সারি নদী বেষ্টিত সিলেটের অদ্যপ্রান্ত

পুরনো ঢাকার অলিতে গলিতে